মৃত্যুচেতনা
দাদাকে বলেছিলুম দোতলার ঘরে বইগুলোতে উই লাগছে
এই বেলা বিলি করে দাও ; ফোটোর
অ্যালবামে ছবিগুলো ফ্যাকাশে
আগ্রহী সম্পাদকদের দিয়ে দাও ; যে চিঠিগুলো ছাপা হয়নি
লিটল ম্যাগাজিনদের দিয়ে দাও
দাদা বলেছিল : "সময় হলে দেবো"
দাদা বলেছিল : "সময় হলে দেবো"
দাদা নিজের চিকিৎসা নিজেই করতো আয়ুর্বেদের বই পড়ে
গাছের পাতা শেকড় শুকনো ফুল "প্রকৃতি যতোটা সময় দেবে"
বউদি ফোন করে বললেন, "আমাকেও তাই বলেছিল তোমার দাদা
এখন পেনসনের হ্যাঙ্গাম, টাকা
তোলার হ্যাঙ্গাম, বাড়ির ঝামেলা
তোমার দাদা জানতো সময় হয়ে গেছে, জানতো যারা খোঁজবার তারা খুঁজবে
নয়তো লেখাদের উইরাই খাক, ছবিরা
ফ্যাকাশে হোক, চিঠি হারিয়ে যাক।"
সবচেয়ে ভয়ের হলো যে হাসপাতালে ভর্তি হলে মুখে নাকে রবারের
প্লা্টিকের
নল গুঁজে হাতে ছুঁচ ফুটিয়ে নানা যন্ত্র দিয়ে ঘেরা বিছানায় শুয়ে
সময় যে হয়ে এসেছে তা টের পায়নি দাদা, মারোয়াড়ি হাসপাতালে
সময় হয়ে এসেছে না আসেনি তা রোগির বৈভবের ওপর নির্ভর করে
ইনশিওরেন্সের উর্ধ্বসীমার দিকে চেয়ে ডাক্তাররা বাজপাখি হয়ে যায়
হাসপাতালগুলো মৃত্যুকে মর্যাদাহীন
করে দিয়েছে, মৃত্যু এখন পণ্য
বাড়িতে নিজের বিছানায় মরা যাবে না কেন, যতোই রোগজারি হোক
শহরের ডাক্তারদের ডাকলে বাড়িতে আসতে চায় না
বুড়োদের জন্য সবচেয়ে ভালো হলো অজ পাড়াগাঁ
যেখানে চিকিৎসার সুবিধা নেই, নাকে মুখে নল গোঁজা হয় না
এর চেয়ে অন্তর্জলী যাত্রা ভালো ছিল মনে হয়
বাড়িতে নিজের বিছানায় মরা যাবে না কেন, যতোই রোগজারি হোক
শহরের ডাক্তারদের ডাকলে বাড়িতে আসতে চায় না
বুড়োদের জন্য সবচেয়ে ভালো হলো অজ পাড়াগাঁ
যেখানে চিকিৎসার সুবিধা নেই, নাকে মুখে নল গোঁজা হয় না
এর চেয়ে অন্তর্জলী যাত্রা ভালো ছিল মনে হয়
সময় হয়ে এলে নদীর তীরে শুয়ে ফোঁটা-ফোঁটা গঙ্গাজল
যা বেশি দিন বাঁচিয়ে রাখবে না
আমি সব বই বিলিয়ে দিয়েছি, সব
ছবি নেটে পোস্ট করে দিয়েছি
সব চিঠি আর হাতে লেখা পাণ্ডুলিপি ছিঁড়ে ফেলে দিয়েছি
সময়ের জন্য অপেক্ষা করি না, সময়কেই বলি "অপেক্ষা কর, দাঁড়া,
আগে এই কবিতাটা লিখে নিই, তারপর
আসিস
কিন্তু হাসপাতালে যাবো না, বাড়িতেই
মরব
বউ আগে মরে গেলে বাড়িতেই মরে পচে থাকব
দুর্গন্ধ বেরোলে প্রতিবেশিরা পুলিশে খবর দেবে
কেউই টের পাবে না কখন সময় হয়ে এসেছিল"
(চিত্রঋণ : Frederick Leighton)
আজ অবধি আমার পড়া অন্যতম সেরা। মন নাড়িয়ে দিয়ে গেল। ধন্যবাদ কবি। ধন্যবাদ অনুপম।
ReplyDeleteশেষ দিকটা কার্ট কোবেইনকে মনে পড়ায়...
ReplyDeletemon kemon kora
ReplyDeleteখুব ভালো লাগলো।
ReplyDeleteকিছু বলার নেই।
ReplyDeleteএকবার উঠে দাঁড়ানোটা খুব প্রাসঙ্গিক... শ্রদ্ধা রইল মলয়'স্যার ও অনুপম'দার প্রতি
ReplyDeleteআহা: একেই কি বলে বুড়ো হাড়ের ভেল্কি? কি বলবো। নতুন প্রজন্মের দেখা দরকার। কায়দাবাজি করলেই হয়না।
ReplyDeleteএই যন্ত্রণাও আমাদের বিলিয়ে দিলেন আজ। তেমন আলমারি বাক্স নেই। কোথায় রাখব?
ReplyDeleteএটা কি গল্প না কবিতা ?
ReplyDeleteআমিও তাই ভাবছিলাম।
Deleteআমিও তাই ভাবছিলাম।
Deleteএমন লেখা মলয়দার পক্ষেই লেখা সম্ভব। ভালো লাগার প্রশ্ন নেই,বিষণ্ণতায় আক্রান্ত
ReplyDeleteএমন লেখা মলয়দার পক্ষেই লেখা সম্ভব। ভালো লাগার প্রশ্ন নেই,বিষণ্ণতায় আক্রান্ত
ReplyDeleteআসলে জীবন কখন কিভাবে তোমাকে নেবে তা জীবন ই জানে....অনথক গভির বিষয় আপনি বলে দিলেন সহজে....মৃত্যুর রঙ হারিয়ে ফেলেছে হাসপাতাল। চুপ করে যাওয়া ছাড়া উপায় রাখলেন না আপনি
ReplyDeleteজীবন স্রোত
ReplyDeleteদারুণ লাগলো।
ReplyDeleteএখনো অনেক কাজ বাকি মলয়দা । মৃত্যু থাক অবচেতনায় ।
ReplyDeleteসমীরদা আমাকে বলেছিলেন," যখন বুঝতে পারবো তোমাকে সব গুছিয়ে দেবো।
ReplyDeleteচারদিন পর এক বছর পূর্ণ হবে।
ReplyDeleteচমৎকার মলয়দা। একটা ছায়া টেনে দিলেন কবিতায়। বিষণ্ণতার ছায়া।
ReplyDeletePassport er Danar odhikar keu keRe nite pare na....
ReplyDeleteঅহো কি লিখেছেন মলয় দা, দারুণ
ReplyDeleteখুব ভালো লাগল
ReplyDeleteকি লেখা যায় এই কবিতার সামনে।একটা নীরব চ্ছল চ্ছল করে।আর পোড়ায়।
ReplyDeleteকি লেখা যায় এই কবিতার সামনে।একটা নীরব চ্ছল চ্ছল করে।আর পোড়ায়।
ReplyDeleteকি লেখা যায় এই কবিতার সামনে।একটা নীরব চ্ছল চ্ছল করে।আর পোড়ায়।
ReplyDelete