বাক্‌ ১১১ : ভ্যারনার ল্যামবেরসি




ষোড়শ শতাব্দীতে নেদারল্যান্ডস যখন বিভক্ত হয়, তখন দক্ষিণ প্রদেশগুলো বেলজিয়ামে চলে যায়। এখন যে অংশের নাম ফ্লান্ডার্স। নেদারল্যান্ডসের প্রধান ভাষা ডাচ্। ফ্লান্ডার্সে ধীরে ধীরে ফ্লেমিশ সাহিত্য গড়ে ওঠে। তারও অনেক পরে, বলা যেতে পারে ১৮৮০ সাল থেকে বেলজিয়ামের অন্যান্য অংশে ফরাসী ভাষায় সার্থক কবিতা রচিত হতে থাকে। ফরাসী দেশের ডাডাইজম এবং সিম্বলইজম আন্দোলনের প্রবল প্রভাব এই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের কবিদের মধ্যেও এসে পড়ে এবং বলা যাতে পারে যে দুই দেশেরই সমভাষার কবিরা একসঙ্গে এই আন্দোলন গড়ে তোলেন। এখনো এই দুই দেশের কাব্য জগতে সাবলীল আদানপ্রদানে কোন বাধা নেই। বেলজিয়াম সাহিত্যের দুটি ভাষা, ফ্লেমিশ ও ফ্রেঞ্চ।

ভ্যারনার ল্যামবেরসির জন্ম ফ্লেমিশ ভাষী পরিবারে, ১৯৪১ সালে। প্রথমে তিনি ফরাসী ভাষাতেই কবিতা লিখবেন ঠিক করেন। তাঁর জীবনের প্রথম বই Silenciaire প্রকাশিত হয়েছে ১৯৭১ সালে। তাঁর কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা ১৬টি। কবি হিসেবে তিনি বিস্ময়কর, অত্যন্ত জটিল ও গভীর এক নিজস্ব কাব্যভাষা তিনি নির্মাণ করেছেন, যার তুলনা অন্য কোনো ভাষাতে পাওয়া যাবেনা। একবার বা দুবার পাঠ করে তাঁর কবিতার মর্ম বোঝা অসম্ভব প্রায়। তাঁর কবিতাকে পাঠকের সঙ্গী করে নিতে হবে।


  
ভ্যারনার ল্যামবেরসি-র কবিতা
অনুবাদ : রিয়া চক্রবর্তী

এখানে নয়, অন্য কোথাও পৃথিবী চুপ করে আছে - কথা আর নীরবতার মাঝখানে, যা সে প্রকাশ করতে চায়নি, অথচ লুকিয়ে রাখতে গিয়ে ধরা পড়ে যায়। যেন এক কবিতা নিজেকে প্রস্ফুটিত করার জন্য প্রস্তুত হয়েও, সঙ্কোচে পুরোপুরি গুটিয়ে নেয় নিজেকে।


কিছু শব্দ আছে যাদের কিছুতেই ব্যক্ত করা যায় না, অথচ তারা তাদের নিজস্বতার সব কিছু দিয়ে দেবে, বিনিময়ে ঘুমন্ত নীচু জল উচ্ছ্বসিত হয়ে যাবে নদীর স্লুইস গেট দিয়ে নিস্তব্ধতার পলি তুলে এনে, প্রবাহিত হবে পরিশ্রুতির স্তর দিয়ে। যারা পুনরায় জীবন্ত হবার জন্য নিশ্চিতভাবেই প্রথমে ডুব দেবে দুর্বোধ্যতায়। সেইসব শব্দের নরম আলোগুলো এতো দীর্ঘ রাত জাগার জন্য অ্যাসিড ছুঁড়ে মারে নিজেদেরই মুখে।


হ্যাঁ এখানেই, আমার জন্য একটা টেবিল সাজানো হবে। ক্যাটক্যাটে রং এর অথবা ছাপা কোনো লিনেনের টেবিলক্লথ দিয়ে। যখন সেটাকে রাত্রির মহাভোজ উৎসবের জন্য রাখা হয়েছে। অসজ্জিত দ্বিধাহীন ভাবে নিজেকে বিলিয়ে দেবার জন্য প্রস্তুত। যদিও এ পর্যন্ত অনাগত, অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথিদের সাজসজ্জা সেটাকে ভয় পাইয়ে দেয়।

 

No comments:

Post a Comment